Dark Mode
Image
  • Friday, 19 December 2025

পাখির ভোজ উৎসব দেখে বিজ্ঞানীদের স্বস্তি

পাখির ভোজ উৎসব দেখে বিজ্ঞানীদের স্বস্তি

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া উপকূলে সম্প্রতি এক বিরল ও আশাব্যঞ্জক দৃশ্যের সাক্ষী হয়েছেন গবেষকরা। সমুদ্রের ওপর দিয়ে উড়ে এসে একদল বাদামি পেলিক্যান হঠাৎই মাছের বিশাল ঝাঁকের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে। তীব্র গতিতে পানিতে ডুব দিয়ে তারা নর্দার্ন অ্যাঙ্কোভিস, প্যাসিফিক সার্ডিন ও ম্যাকরেলের মতো ছোট মাছ শিকার করছে। প্রাণিবিজ্ঞানীদের ভাষায়, এই দৃশ্য যেন এক ‘ভোজ উৎসব’। সংকটে থাকা পেলিক্যান প্রজাতির জন্য এটি স্বস্তির বার্তা হিসেবেই দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।

পেলিক্যান আকারে বিশাল সামুদ্রিক পাখি। ভূমিতে কিছুটা ভারী মনে হলেও আকাশে তারা অত্যন্ত দক্ষ উড়ুক্কু। একটি পূর্ণবয়স্ক পেলিক্যানের গড় ওজন প্রায় চার কেজি এবং ডানার বিস্তার সাত ফুট পর্যন্ত হতে পারে। এদের ঠোঁটের নিচে থাকা বিশেষ থলিটি একবারে প্রায় ১২ লিটার পানি ধরে রাখতে সক্ষম, যা পৃথিবীর অন্য যেকোনো পাখির তুলনায় বড়। এত বড় শরীর ধরে রাখতে প্রতিদিন তাদের প্রায় দেড় কেজি মাছের প্রয়োজন হয়।

ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার সামুদ্রিক পাখিবিশারদ ট্যামি রাসেল বার্তা সংস্থা এপিকে বলেন, “পেলিক্যানের সংখ্যা এখনো পুরোপুরি স্থিতিশীল নয়। কিছু বিষয় আমাদের উদ্বিগ্ন করে।” তবে উপকূলে এই ভোজ উৎসব প্রমাণ করছে, অন্তত এখন মাছের প্রাচুর্য রয়েছে। আর সেই খাদ্যের টানেই পেলিক্যানরা আবার উপকূলমুখী হচ্ছে।

ক্যালিফোর্নিয়ার পাথুরে উপকূলে পেলিক্যানদের পাথরের চূড়ায় সারিবদ্ধ হয়ে বসে থাকতে দেখা যায়। ব্যস্ত যাত্রীদের মতো গা ঘেঁষাঘেঁষি করে দাঁড়িয়ে তারা সুযোগের অপেক্ষা করে। এরপর একসঙ্গে উড়াল দিয়ে মাছের ঝাঁকের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। পানিতে বড় ঠোঁট ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে সাদা ফেনায় ভরে ওঠে চারপাশ। এই দৃশ্য দেখে ট্যামি রাসেল বলেন, “যখন পেলিক্যান খাবার পায় না, তখন তারা দ্রুত দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই এমন দৃশ্য আমাদের জন্য আশার।”

খাবারের খোঁজে এখন হাজার হাজার পাখি আশপাশের সৈকত ও পাথুরে খাঁজে ভিড় করছে। পেলিক্যানের সঙ্গে পানকৌড়ি ও গাংচিলও যোগ দিচ্ছে এই ভোজে। উপকূলজুড়ে তখন কেবল ঢেউয়ের গর্জন আর পাখির ডাক শোনা যায়।

একসময় ক্যালিফোর্নিয়ার বাদামি পেলিক্যান মারাত্মক সংকটে পড়েছিল। ডিডিটি নামের ক্ষতিকর কীটনাশকের প্রভাবে তাদের ডিমের খোসা পাতলা হয়ে যাচ্ছিল, ফলে বংশবিস্তার ব্যাহত হয়। এ কারণে পাখিটিকে বিপন্ন প্রজাতির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর ২০০৯ সালে পরিস্থিতির উন্নতি হলে সেই তালিকা থেকে পেলিক্যানকে বাদ দেওয়া হয়।

তবে বর্তমানে আবারও নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে এই পাখি। সমুদ্রের উষ্ণতা বাড়ায় অনেক মাছ গভীর ও ঠান্ডা পানির দিকে সরে যাচ্ছে, ফলে উপকূলে খাদ্য সংকট তৈরি হচ্ছে। পাশাপাশি বিষাক্ত শৈবাল ব্লুমও বড় হুমকি হয়ে উঠেছে। গত বছর শৈবালের বিষক্রিয়ায় অসুস্থ ও অপুষ্ট বহু পেলিক্যান উদ্ধার করা হয়েছিল।

বিজ্ঞানীরা পাখিদের পায়ে ইলেকট্রনিক ব্যান্ড লাগিয়ে তাদের চলাচল ও আচরণ পর্যবেক্ষণ করছেন। ট্যামি রাসেলের মতে, প্রজনন মৌসুমের আগে পেলিক্যানদের এমন সক্রিয় ও আক্রমণাত্মক খাদ্যগ্রহণ ভবিষ্যতে তাদের সংখ্যা বাড়ার ইতিবাচক ইঙ্গিত দিচ্ছে।
আলাদা করেও সাজিয়ে দিতে পারি।

পাখির ভোজ উৎসব দেখে বিজ্ঞানীদের স্বস্তি

Comment / Reply From