Dark Mode
Image
  • Friday, 19 December 2025
ওয়েডিং ফটোগ্রাফির সেকাল–একাল: বদলে যাওয়া স্মৃতি ধারণের গল্প

ওয়েডিং ফটোগ্রাফির সেকাল–একাল: বদলে যাওয়া স্মৃতি ধারণের গল্প

 

এক সময় বিয়ের অনুষ্ঠানে ছবি তোলা মানেই ছিল দু–একটি পারিবারিক গ্রুপ ছবি। একজন ফটোগ্রাফার, একটি বড় ক্যামেরা আর সীমিত কয়েকটি ফ্রেমেই শেষ হতো পুরো আয়োজন। তখন বিয়ের দিনের আবেগ, হাসি-কান্না বা ছোট ছোট মুহূর্ত ক্যামেরায় ধরে রাখার বিষয়টি তেমন গুরুত্ব পেত না। সময় বদলেছে, বদলেছে মানুষের ভাবনা ও প্রযুক্তি। সেই পরিবর্তনের ধারায় জন্ম নিয়েছে আধুনিক ওয়েডিং ফটোগ্রাফি, যা এখন বিয়ের আয়োজনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

### বিশ্ব থেকে বাংলাদেশে ওয়েডিং ফটোগ্রাফির পথচলা

বিশ্বে ওয়েডিং ফটোগ্রাফির শুরু উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে। তখন ক্যামেরা ছিল ভারী, ছবি তোলার প্রক্রিয়া জটিল ও সময়সাপেক্ষ। তাই বেশির ভাগ বিয়ের ছবি তোলা হতো স্টুডিওতে, নির্দিষ্ট ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে। প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে ক্যামেরা হালকা ও সহজ হওয়ায় ফটোগ্রাফাররা সরাসরি অনুষ্ঠানস্থলে গিয়ে কাজ করার সুযোগ পান।

বাংলাদেশে ওয়েডিং ফটোগ্রাফি আলাদা ধারায় জনপ্রিয় হতে শুরু করে মূলত ২০০০ সালের পর। আর ২০১০ সালের পর থেকে এটি একটি পেশাদার ও সৃজনশীল শিল্প হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়।

### আবেগ ও গল্প বলার শিল্প

বিয়ে জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও আবেগঘন দিনগুলোর একটি। তাই এখন ওয়েডিং ফটোগ্রাফি শুধু বিয়ের মূল আনুষ্ঠানিকতায় সীমাবদ্ধ নেই। মেহেদি, গায়ে হলুদ, আবির খেলা, বিয়ের পর্ব, বউভাত কিংবা রিসেপশন—প্রতিটি আয়োজনই গুরুত্বের সঙ্গে কভার করা হয়।

বর-কনের প্রস্তুতির ব্যস্ততা, কনের লাজুক হাসি, পরিবারের আবেগী চোখ, বন্ধুদের উচ্ছ্বাস—এই স্বাভাবিক ও অকৃত্রিম মুহূর্তগুলোই আধুনিক ওয়েডিং ফটোগ্রাফির মূল আকর্ষণ। ক্যান্ডিড ফটোগ্রাফি ও সিনেম্যাটিক ভিডিওর মাধ্যমে এসব মুহূর্ত গল্পের মতো করে তুলে ধরা হয়।

### প্রি-ওয়েডিং ফটোগ্রাফির জনপ্রিয়তা

বর্তমানে প্রি-ওয়েডিং ফটোগ্রাফিও বিয়ের আয়োজনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে। বিয়ের আগে নির্দিষ্ট লোকেশন ও সময়ে বর-কনের স্বাভাবিক ও পরিকল্পিত মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দী করাই প্রি-ওয়েডিং শুটের মূল উদ্দেশ্য। এতে আনুষ্ঠানিকতার চাপ কম থাকে এবং সম্পর্কের গল্পটা আরও প্রাণবন্তভাবে ধরা পড়ে।

বাংলাদেশে ২০১৫ সালের পর থেকে প্রি-ওয়েডিং ফটোগ্রাফি জনপ্রিয়তা পায়। পার্ক, নদীর তীর, ক্যাম্পাস, পুরোনো বাড়ি কিংবা খোলা প্রকৃতিতে থিমভিত্তিক শুটের মাধ্যমে দম্পতিরা নিজেদের গল্প তুলে ধরছেন। এতে বিয়ের দিনের ক্যামেরার সামনেও বর-কনে বেশি স্বচ্ছন্দ থাকেন।

### খরচ ও প্যাকেজের হিসাব

বাংলাদেশে ওয়েডিং ফটোগ্রাফির খরচ নির্ভর করে কাজের ধরন, দিনের সংখ্যা ও টিমের আকারের ওপর।

* সাধারণ ফটোগ্রাফি প্যাকেজ: প্রায় ৩০–৫০ হাজার টাকা
* ফটোগ্রাফি ও ভিডিওসহ স্ট্যান্ডার্ড প্যাকেজ: ৬০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা
* সিনেম্যাটিক ভিডিও, ক্যান্ডিড ফটোগ্রাফি ও প্রিমিয়াম এডিটিংসহ প্যাকেজ: ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা বা তার বেশি

এসব প্যাকেজে সাধারণত ক্যান্ডিড ছবি, ট্র্যাডিশনাল ভিডিও, হাইলাইটস ভিডিও ও অ্যালবাম ডিজাইন অন্তর্ভুক্ত থাকে। আত্মীয় বা বন্ধু ফটোগ্রাফার হলে খরচ কমানো সম্ভব হলেও পেশাদার মান নাও পাওয়া যেতে পারে।

### পেশাদার টিম ও ফ্রিল্যান্সারদের উত্থান

ঢাকাকে কেন্দ্র করে ওয়েডিং ফটোগ্রাফি শিল্পের বিস্তার বেশি হলেও এখন বিভাগীয় শহরগুলোতেও দক্ষ ফটোগ্রাফার পাওয়া যাচ্ছে। পাশাপাশি অনেক তরুণ-তরুণী ফ্রিল্যান্সার হিসেবেও এই পেশায় যুক্ত হচ্ছেন।

### ভালো ওয়েডিং ফটোগ্রাফার বাছাইয়ে যেসব বিষয় খেয়াল রাখবেন

* ফটোগ্রাফারের আগের কাজ বা পোর্টফোলিও দেখুন
* ছবি ও ভিডিওর স্টাইল আপনার পছন্দের সঙ্গে মেলে কিনা যাচাই করুন
* প্যাকেজে কী কী সেবা আছে, তা পরিষ্কারভাবে জেনে নিন
* খরচ, সময় ও ডেলিভারির বিষয় লিখিতভাবে নিশ্চিত করুন
* আগের ক্লায়েন্টদের রিভিউ বা অভিজ্ঞতা জানার চেষ্টা করুন

ওয়েডিং ফটোগ্রাফির সেকাল–একাল: বদলে যাওয়া স্মৃতি ধারণের গল্প

Comment / Reply From